ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত স্বতন্ত্র চিকিৎসা পদ্ধতি। একজন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক রোগীর বাত-ব্যথা বা আঘাতজনিত ব্যথার মতো স্বাস্থ্যসমস্যা নির্ণয় করে পরিপূর্ণ চিকিৎসাসেবা দেন।
বাংলাদেশে বাত-ব্যথা ও পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগীদের যথাযথ চিকিৎসা হয় না। এ কারণে কর্মহীন মানুষের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য রোগ নিরাময় ও প্রতিরোধে প্রয়োজন যথাযথ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন। দীর্ঘমেয়াদি রোগ, বিশেষ করে বাত-ব্যথা ও পক্ষাঘাতের রোগীদের সমস্যা ওষুধ দিয়ে নিরাময় সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা। এবার জেনে নেওয়া যাক কাদের ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা প্রয়োজন।
স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যা যাদের
স্ট্রোক, আঘাত অথবা শল্যচিকিৎসায় স্নায়ুতন্ত্রের জটিলতায় ভুগে পঙ্গুত্ব বরণ করে অনেকে। এ ধরনের রোগীর শরীর অবশ হয়ে যায় বা মাংসপেশি শক্ত হয়ে যায়। এসব রোগীর শরীরের কর্মক্ষমতা বাড়ানো এবং অস্থিসন্ধি সচল রাখা চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়ে। এঁদের দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনায় সক্ষম করে তুলতে ফিজিওথেরাপির বিকল্প নেই।
মাংসপেশি ও হাড়ের সমস্যা যঁাদের
ভেঙে যাওয়া হাড় জোড়া লাগার পর আঘাতপ্রাপ্ত অংশের মাংসপেশি ও হাড় ঠিকমতো কাজ করতে সময় নেয়। এ ধরনের সমস্যায় আক্রান্তদের ফিজিওথেরাপি প্রয়োজন। এ ছাড়া নানা ধরনের বাত যেমন স্পন্ডিলাইটিস, স্পন্ডাইলোসিস, স্পন্ডিলিস্থেসিস; অর্থাৎ ঘাড়, কোমর ও মেরুদণ্ডের ব্যথায় ভুগছেন যঁারা, তঁাদেরও এই চিকিৎসা প্রয়োজন। পাশাপাশি অস্থিসন্ধির বাত, হাঁটুর ব্যথা, ফ্রোজেন শোল্ডার বা কাঁধে ব্যথা এবং পায়ের গোড়ালির সমস্যায় আক্রান্তদের ফিজিওথেরাপি দিতে হয়।
পোড়া রোগীদের জন্য
পোড়া রোগীদের ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় ধরে মাংসপেশির সংকোচনের কারণে স্থায়ীভাবে পঙ্গুত্ববরণের আশঙ্কা থাকে। এই ঝুঁকি থেকে মুক্তি পেতে প্রয়োজন ফিজিওথেরাপি।
শিশুরোগের ক্ষেত্রে
জন্মগতভাবে যেসব শিশু প্যারালাইসিস বা সেরিব্রাল পালসি ও মেরুদণ্ডের সমস্যায় আক্রান্ত, তাদের ফিজিওথেরাপি দিতে হয়। এ ছাড়া শিশুদের ঘাড়, হাত, পা বেঁকে যাওয়া ঠিক করতেও এই চিকিৎসার বিকল্প নেই।
হৃদ্রোগ ও ফুসফুসের সমস্যায়
বুকে কফ জমা, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের এই চিকিৎসা প্রয়োজন। এ ছাড়া হৃদ্যন্ত্রে অস্ত্রোপচারের আগে ও পরে রোগীর অক্সিজেন ধারণক্ষমতা ঠিক রাখতে ফিজিওথেরাপি দিতে হয়। ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) রোগীদেরও ফিজিওথেরাপির প্রয়োজন হয়।
শল্যচিকিৎসায়
সাধারণত অস্ত্রোপচারের আগে ও পরে মাংসপেশি ও অস্থিসন্ধির স্বাভাবিক ব্যবহার বাধাগ্রস্ত হয়। তাই রোগীকে সঠিকভাবে চলাফেরায় সক্ষম করে তুলতে ফিজিওথেরাপির প্রয়োজন হয়।
বার্ধক্যজনিত সমস্যা
বার্ধক্যে শরীরের বিভিন্ন অংশের ব্যথা ও মাংসপেশিতে ক্ষয়ের কারণে প্রবীণ ব্যক্তিরা চলার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। এসব মানুষের স্বাভাবিক চলাচলের ক্ষমতা বজায় রাখতে ফিজিওথেরাপির বিকল্প নেই।
পঙ্গু পুনর্বাসন
দুর্ঘটনার কারণে হাত-পা হারানো ব্যক্তির কৃত্রিম অঙ্গ সংযোজনের প্রয়োজন হয়। এসব মানুষের চলাফেরা স্বাভাবিক করতে ফিজিওথেরাপি একমাত্র পুনর্বাসন পদ্ধতি।
লেখক: প্রধান ফিজিওথেরাপিস্ট
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল