কার্ডিও ভাসকুলার ডিজিজ সারাবিশ্বে মৃত্যুর এক নম্বর কারণ হিসেবে চিহ্নিত। একটি গবেষণায় দেখা যায় যে, বাংলাদেশের ২০-২৫% লোক উচ্চ রক্তচাপ, ৪-৬% করোনারি আর্টারির সমস্যায় এবং ১ হাজার শিশুর মধ্যে ২৫-৩০ জন জন্মগত হৃদরোগের সমস্যায় ভুগছে। চল্লিশোর্ধ বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপ হৃদরোগের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। এই বৃহৎ সংখ্যক রোগীদের সঠিক চিকিৎসা সুব্যবস্থার জন্য কার্ডিয়াক রিহ্যাবিলিটেশন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
কার্ডিয়াক রিহ্যাবিলিটেশন বা পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় একজন হার্টের রোগীর কার্ডিওভাস্কুলার সিস্টেমকে উন্নত করা এবং সার্জারির পরে দ্রুত এবং স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করা হয়। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র থেরাপিউটিক এক্সারসাইজই করানো হয় না, বরং তার সাথে নিউট্রিশন ব্যবস্থাপনা এবং আচরণগত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন রোগব্যাধি যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে কর্মজীবনে সম্পূর্ণ রূপে ফিরিয়ে আনার জন্য দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়। রোগীর মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য কাউন্সিলিং সেবাও নিশ্চিত করা হয়।
ড. লিনডসে এন্ডারসন ২০১৭ সালে প্রকাশিত ইংল্যান্ডের ২৮৯০ জন রোগীর উপর চালানো সর্বমোট ২৩টি পরীক্ষামূলক গবেষণায় ওপেন হার্ট সার্জারি বা বাইপাস সার্জারি পরবর্তী রোগীদের প্রাতিষ্ঠানিক পুনর্বাসন (কার্ডিয়াক রিহ্যাবিলিটেশোন) প্রক্রিয়ার গুরুত্বের কথা উল্লেখ করেছেন। এ সম্পর্কিত চিকিৎসা ব্যবস্থায় একজন রোগী সপ্তাহে ২টি সেশনে ফিজিওথেরাপি গ্রহণ করেন। প্রতিটি সেশনের সময় হয় ৪৫ মিনিট করে। যেখানে প্রথম ১০ মিনিট ট্রেডমিলে এক্সারসাইজ এবং মাংসপেশির স্ট্রেচিং, তারপর ১৫ মিনিট জোরে হাঁটা, এরপর আরও ১৫ মিনিট আস্তে আস্তে দৌড়ানো বা জগিং করা। এরপর সর্বশেষ ৩-৫ মিনিট কুল ডাউন এক্সারসাইজ যেমন কম গতিতে হাঁটা, নাক দিয়ে বুক ভরে নিঃশ্বাস নিয়ে মুখ দিয়ে ছাড়া, স্লো স্ট্রেচিং ইত্যাদি করা হয়। রোগী এভাবে মোট ১২ সপ্তাহ বা ৩ মাস ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নেবেন। হার্টের অসুখ যেমন উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট এটাক, মায়োপ্যাথি ইত্যাদি ক্ষেত্রে কার্ডিয়াক রিহ্যাব অত্যন্ত জরুরি। গবেষণা মতে, হার্ট এটাক করা রোগীদের কার্ডিয়াক রিহ্যাবিলিটেশনের পর দ্বিতীয়বার হার্ট এটাক করার সম্ভাবনা কমে।
কার্ডিয়াক রিহ্যাবিলিটেশন প্রক্রিয়া এবং এতে অন্তর্ভুক্ত ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা আধুনিক ও গবেষণালব্ধ যা উন্নত দেশের বিভিন্ন রকম হার্টের রোগীদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হচ্ছে। তবে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য কাঠামোতে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা পেশাজীবীদের অন্তর্ভুক্তি এখনও হয়নি। এর ফলে রোগীদের পুনর্বাসন ব্যাহত হচ্ছে এবং স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা খুবই কস্টসাধ্য হয়ে পড়ছে। রোগীর সুচিকিৎসা এবং সঠিক নিয়মে পুনর্বাসনের জন্য কার্ডিয়াক রিহ্যাব প্রোগ্রাম এবং এর উল্লেখযোগ্য ভূমিকায় ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকদের অন্তর্ভুক্ত ভীষণ জরুরি।
কার্ডিয়াক রিহ্যাব তথা অপারেশনের পর ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার গুরুত্ব অপরিসীম। বেসরকারিভাবে ফিজিওথেরাপি সেন্টারে কার্ডিয়াক রিহ্যাবিলিটেশনের ব্যয়ভার সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে প্রায়। বাংলাদেশে হৃদরোগ রোগীদের জন্য জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল সেবা প্রদান করে থাকে। তাই এমন একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠানে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে কার্ডিয়াক রিহ্যাব সেন্টার স্থাপন করতে পারলে দেশের জনগণ অনেক বেশি উপকৃত হবে।
লেখক: ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ
সহকারী অধ্যাপক, বাংলাদেশ হেলথ প্রফেশনস ইনস্টিটিউট,
সি আর পি, সাভার, ঢাকা