বর্তমানে বাংলাদেশ তথা বিশ্বে করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রকোপে মহামারি চলছে। এখনও শতভাগ সাফল্য নিয়ে ভাইরাসজনিত এই রোগটির বিরুদ্ধে কোনো ভ্যাক্সিন কিংবা প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি। বিভিন্ন দেশে করোনার প্রকৃতি অনুযায়ী বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশে স্বাস্থ্যবিধি প্রয়োগ করে করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষায় প্রানপন চেষ্টা চলছে। এরমধ্যেই ওয়ার্ল্ড কনফেডারেশন অফ ফিজিক্যাল থেরাপি (WCPT) কোভিড ১৯ করোনা ভাইরাসের প্রকোপে সৃষ্ট ফুসফুসের সমস্যা মোকাবেলায় ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার গাইডলাইন প্রকাশ করেছে, যা অনুসরন করে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (ICU) তে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকগন চিকিৎসা দিচ্ছেন এবং তা অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখছে। বিশেষ করে উন্নত বিশ্বে কোভিড-১৯ এ মর্টালিটি রেট প্রচুর কমে গিয়েছে এবং রোগী সুস্থ হবার হার বেড়েছে।
পাশাপাশি করোনা ভাইরাসে আক্রান্তে না হয়েও অনেকেই মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছেন এবং কার্যত লকডাউনে জনজীবন স্থবির হয়ে গেছে৷ যার ফলে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যহত হচ্ছে। কায়িক পরিশ্রম কমে গিয়ে সাধারন মানুষ কার্যত অলস হয়ে যাচ্ছে। এর ফলশ্রুতিতে আমাদের শরীরে নানাবিধ জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ব্যথাজনিত সমস্যা ও অসারতা। সাথে সাধারন মানুষরা মানসিক উদ্বিগ্নতায়ও ভুগছে। এবং এটিকে কোনো প্রকার ভ্যাক্সিন কিংবা মেডিসিন এর মাধ্যমে দূরিকরন সম্ভব নয়। এই স্থবিরতা ও আতংকজনিত মানসিক ও শারীরিক সমস্যার অন্যতম প্রধান চিকিৎসা হচ্ছে ফিজিওথেরাপি।
ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক কর্তৃক নির্দেশিত কিছু থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ বিশেষত বিষণ্ণতা ও উদ্বেগজনিত মানসিক সমস্যা দূরীকরনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
যখন একজন ব্যক্তি বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় ভুগতে থাকেন , তখন ঐ ব্যাক্তির মানসিক চাপ বা উদ্বেগ বৃদ্ধিপায়। যেমন ধরা যাকো একজন ব্যক্তি হঠাৎ স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছেন। তার শরীরে স্ট্রোকের প্রভাবে এক পাশ প্যারালাইজড হয়ে গেলো, তখন উক্ত ব্যাক্তিটির শারীরিক অসুস্থতার পাশাপাশি মানসিক অসুস্থতাও পরিলক্ষিত হতে পারে। যার কারণ হিসেবে দেখা যায়, যিনি কি না দুদিন আগেও সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন যাপন করতেন, তিনি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। স্ট্রোকের ফলে তার শরীরের এক পাশ প্যারালাইজড হয়ে হাত-পায়ে কোনো শক্তি পাচ্ছেন না। তিনি তখন স্বাভাবিকভাবেই ভাবনায় পড়ে যান, এবং একধরনের আক্ষেপ করতে থাকেন, যে তিনি কি আবার আগের মতো সুস্থ হতে পারবেন? আগের মতো স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবেন ? এসব ভাবতে ভাবতেই উত্তরা খুজে না পেয়ে হতাশ হয়ে একধরনের মানসিক চিন্তায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন৷ তেমনিভাবে আরো কিছু রোগে আমরা সাধারণ ভুগে থাকি, তারমধ্যে রয়েছে যারা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ব্যথা বেদনায় ভোগেন অপারেশন জনিত জটিলতায় ভোগেন, ইত্যাদি তখন তারাও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন ও মানসিক বিষণ্ণতায় ভোগেন। এই পরিস্থিতিতে যদি ফিজিওথেরাপি চিকিৎসায় একজন অভিজ্ঞ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের মাধ্যমে যখন আমরা আমাদের শারিরীক সমস্যা তথা, বাতব্যথা ,আঘাতজনিত ব্যথা, অপারেশন জনিত ব্যথা ও প্যারালাইসিস জনিত সমস্যা থেকে ধীরে ধীরে সুস্থ হতে থাকি তাহলে আমাদের শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি মানসিকভাবে আমরা স্বস্তি পেতে থাকি,ফলে মনের ভিতর আসা ডিপ্রেশন বা বিষণ্ণতা দূর হয়। একজন আপাত সুস্থ কিন্তু বিষাদগ্রস্থ ব্যক্তিও ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক নির্দেশিত থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ ফলো করলে তার শরীরে হরমোনাল ব্যালেন্স সৃষ্টি হয় এবং তিনি মানসিকভাবে প্রফুল্ল হয়ে ওঠেন। ২০১৮ সনের বিশ্ব ফিজিওথেরাপি দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিলো,”মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে ফিজিওথেরাপি”। সুতরাং আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে অন্যান্য চিকিৎসার পাশাপাশি ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার ভূমিকাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তাই ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা সম্পর্কে সচেতনতা আরো বাড়াতে হবে। অবশ্যই নূন্যতম বিপিটি (ব্যাচেলর অব ফিজিওথেরাপি) ডিগ্রিধারী ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা গ্রহন করতে হবে।
সঠিক ফিজিওথেরাপি নিয়ে সুস্থ্য থাকুন ভালো থাকুন। কোভিড ১৯ করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় ভয় নয় সচেতন হোন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন।
প্রদীপ চন্দ্র দাস,
ফিজিওথেরাপিষ্ট,
এসাইনমেন্ট এডিটর, ফিজিওনিউজ২৪.কম
সহকারী সম্পাদক, মেডিনিউজবিডি.কম
প্রচার সম্পাদক, বঙ্গবন্ধু ফিজিওথেরাপি পরিষদ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি