ফিজিওথেরাপিস্টরা কখন মর্যাদা পাবে?

প্রতিবেদন

শেরেবাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে খেলা দেখছেন একঝাঁক ক্রিকেটপ্রেমী দর্শক। হঠাৎ করে একটি বল এসে লাগল তামিমের পায়ে। তামিম মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। সবাই মনে করল তামিম আজ আর খেলতে পারবে না। কিন্তু না? কিছুক্ষণের মধ্যেই সাদা বক্স নিয়ে মাঠে প্রবেশ করল একজন লোক। তারই হাতের ছোঁয়ায় তামিম আবার উঠে দাড়াল। সবাই ভাবল লোকটি মনে হয় তামিমকে জাদু করছে। লোকটিকে নিয়ে সবাই উদ্বিগ্ন। কে সেই লোক?
সবার চিন্তার উর্ধ্বে মাঠের বড় স্ক্রিনে ভেসে উঠল সেই লোকটি হল একজন ফিজিওথেরাপিস্ট। আজকে ফিজিওথেরাপিস্ট ও বাংলাদেশ নিয়ে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞের মতামত তুলে ধরব।
ফিজিওথেরাপি শব্দটি ল্যাটিন শব্দ থেকে এসছে। এর অর্থ হলো শারীরিক চিকিৎসা। বর্তমান চিকিৎসা বিজ্ঞানের সবচেয়ে আধুনিক স্বতন্ত্র প্বার্শপ্রতিক্রিয়াহীন চিকিৎসা পদ্ধতি হলো ফিজিওথেরাপি। বিশেষ করে বাত, ব্যথা, পঙ্গু, প্যারালাইসিস, স্টোর্ক, কার্ডিওপালমোনারি, নিউরোলজি , পেডিয়েট্রিকস , গাইনেকোলজি সমস্যায় এক অনবদ্য চিকিৎসা পদ্ধতি হল ফিজিওথেরাপি । যার কারণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ৩২২৬ নাম্বার নিয়মে ফিজিওথেরাপিকে স্বতন্ত্র চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। ১৯৭২ সালে বজ্ঞবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধাহত মুক্তিযুদ্ধাদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য বিদেশ থেকে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক বাংলাদেশে নিয়ে আসেন।তারই হাত ধরে ১৯৭৩ সালে আরআইএইচডি- (বর্তমান ন্যাশন্যাল ইন্সটিটিউট অব ট্রমাটোলজি অ্যান্ড অর্থপেডিক রিহেবিলিটেশন) এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন ফ্যাকাল্টির অধীনে বিসএসসি ইন ফিজিওথেরাপি কোর্স চালু হয়। কিন্তু এক অশুভ শক্তির বলয়ে কিছুদিন পর এই কোর্সটি বন্ধ হয়ে যায়। তারপর দীর্ঘ কালো অন্ধকার রাতের পর ১৯৯৩-১৯৯৪ সেশনে পুনরায় এই কোর্সটি চালু হয়।
আজ ২০২০ সাল, যেখানে এমবিবিএস, বিডিএস চিকিৎসকরা তাদের যথাযোগ্য মর্যাদা পাচ্ছে। সেখানে বিপিটি ডিগ্রিধারী ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক তারা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কিন্তু উন্নত বিশ্বের দিকে তাকালেই দেখা যায় ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার জয় জয়কার। আমেরিকায় মাস্কোস্কেলেটাল এর সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা হল ফিজিওথেরাপি। পাকিস্তানে এ শিক্ষার জন্য ডিপিটি কোর্স চালু আছে।
বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় লক্ষাধিক এমবিবিএস চিকিৎসক আছে। আর সেখানে মাত্র তিন থেকে চার হাজার কোয়ালিফাইড ফিজিওথেরাপিস্ট রয়েছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এক বেসরকারি হিসাব মতে দেখা গেছে, বাংলাদেশে প্রায় দুই কোটি লোকের ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার প্রয়োজন।
এ ব্যাপারে ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলা জানা গেছে যে , আমাদের প্বার্শবর্তী দেশ ভারতে প্রায় আাড়াইশ ফিজিওথেরাপি কলেজ রয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে, বাংলাদেশে একটিও ফিজিওথেরাপি কলেজ নেই। পাকিস্তানের ক্রিকেটার ইন্জামুল হককে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, খেলার উন্নয়নে কি দরকার? তিনি বলেছেন, একজন ভালো কোচ এবং একজন ভালো ফিজিওথেরাপিস্ট।

নিটোরের একজন ছাত্র বলেন, এমবিবিএস চিকিৎসক ৬২০০ ঘন্টা পড়াশুনা করে, অপরদিকে বিডিএস চিকিৎসক ৪৮০০ ঘন্টা পড়াশুনা করে। আর বিপিটি ডিগ্রিধারী চিকিৎসক ৫৬০০ ঘন্টা পড়াশুনা করে। ৫৬০০ ঘন্টা পড়াশুনা করে আমরা কেনো আমাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হবো?
আরেক জন নিটোরের ছাত্র বলেন,নিটোর প্রথম সরকারি ফিজিওথেরাপি প্রতিষ্ঠান হওয়া স্বত্বেও আমাদের ভালো কোনো ক্লাসরুম নেই। আমাদের থাকার হল নেই। ভালো লাইব্রেরি নেই। মহাখালীর আইএইচটির একজন ফিজিওথেরাপির ছাত্র বলেন, আমরা এতো কষ্ট করে ইন্টার্নশীপ পালন করি। তারপরও আমাদের কোনো ভাতা দেওয়া হয় না।যেখানে এমবিবিএস, বিডিএস ছাত্ররা সম্মানী হিসেবে ইন্টার্ন ভাতা পায়। সিআরপির থেকে সদ্য পাশ করা একজন ফিজিওথেরাপি ছাত্র বলল, দেখুন ভাই আমরা পাঁচ বছর এতো কষ্ট করে ফিজিওথেরাপি পড়া শেষ করলাম। এখন আমাদের কোনো চাকরি নাই। বিসিএসে স্বাস্থ্য ক্যাডারে আমাদের কোনো পোস্ট নেই। যার কারণে আমাদের দেশের বাইরে চলে যেতে হয়। ফিজিওথেরাপি কলেজ, বিসিএসে কোটা নির্ধারন , ইন্টার্ন ফি সহ, রিহেবিলিটেশন কাউন্সিল ২০১৮ আইনের প্রবিধানমালা প্রণয়নের মাধ্যমে ফিজিওথেরাপিস্টদের যথাযথ অধিকার সরকারিভাবে বাস্তবায়নের জোর দাবি জানিয়েছেন ফিজিওথেরাপি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনগুলো।

মোহাম্মদ রাকিব
নিটোর, ২৫ ব্যাচ।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *