অস্টিওআর্থ্রাইটিস নিয়ে কিছু প্রচলিত

স্বাস্থ্যকথা

হাঁটুব্যথার প্রধান কারণগুলোর একটি অস্টিওআর্থ্রাইটিস বা বয়সজনিত সন্ধিক্ষয়। সহজ ভাষায় অস্টিওআর্থ্রাইটিস হলো হাঁটুর হাড়ের ক্ষয় রোগ। বিশ্বজুড়ে ৫২০ মিলিয়ন মানুষ অস্টিওআর্থ্রাইটিস আক্রান্ত এবং এর মধ্যে ৬০% মানুষই হাটুর অস্টিওআর্থ্রাইটিস আক্রান্ত। বিকলাঙ্গতার জন্য দায়ী ২৯১ টি কারন নিয়ে গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে কোমরের এবং হাঁটুর অস্টিওআর্থ্রাইটিস ১১ তম অবস্থানে রয়েছে। আরেকটি গবেষনায় দেখা গিয়েছে ১৯৯০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী অস্টিওআর্থ্রাইটিস আক্রান্তের সংখ্যা ৪৮% বৃদ্ধি পেয়েছে। অস্টিওআর্থ্রাইটিসে আক্রান্তের সংখ্যা এত ব্যাপক এবং এর প্রচলিত চিকিৎসা ব্যাবস্থা থাকার পরেও আমাদের মাঝে অস্টিওআর্থ্রাইটিস সম্পর্কে কিছু ভুল ধারনা রয়েছে। চলুন যেনে নেই এগুলো সম্পর্কে:

১। অস্টিওআর্থ্রাইটিস শুধুমাত্র বয়স্কদের হয়ে থাকে:

যদিও বেশি বয়স্কদের মাঝে এই সমস্যাটি বেশি দেখা যায় তবে বিশ থেকে ত্রিশের কোঠায়ও অস্টিওআর্থ্রাইটিস হতে পারে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে ৫০% যুবক ও তরুনদের মাঝে অস্টিওআর্থ্রাইটিস এর লক্ষন দেখা গিয়েছে যারা বিভিন্ন সময় তাদের ঐ সকল জয়েন্টে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন এবং এই লক্ষন গুলো তাদের আঘাত পাওয়ার ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে প্রকাশ পেয়েছে। এর অর্থ হলো এরা অনেক কম বয়সেই অস্টিওআর্থ্রাইটিসে আক্রান্ত হচ্ছেন এবং তাদের বাকি জীবন একে নিয়ন্ত্রণের মধ্য অতিবাহিত করতে হবে। তাই তাদের এই বয়স থেকেই জানতে হবে কিভাবে তারা এই অবস্থায় ব্যাথা মুক্ত থেকে সুন্দর জীবনযাপন করতে পারে।

২। যত ব্যাথার তীব্রতা তত বেশি আক্রান্ত:

ব্যাথা অনুভব করা বিষয়টি অনেক জটিল যা অনেককিছুর ওপর নির্ভর করে, শুধুমাত্র জয়েন্টের কাঠামো পরিবর্তনের সাথেই সম্পর্কযুক্ত নয়। তাই অনেক ব্যাথা মানে জয়েন্টের অনেক ক্ষতি আর কম ব্যাথা মানে যে জয়েন্টের কম ক্ষতি হয়েছে এমনটি নয়। ব্যাথার তীব্রতা নির্ভর করে আপনার আবেগ, মেজাজ, উদ্বেগ, চাপ,পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব, ক্লান্তি, কাজের ব্যাস্ততা এবং ব্যাথার স্থানের উপর।

৩। ব্যায়াম আরো বেশি ক্ষতি সাধন করবে:

ব্যাপারটি আসলে সম্পুর্ন উল্টো,  ব্যায়াম না করলেই বরং আপনার ক্ষতি। আপনার সঠিক ব্যায়াম ও নাড়াচাড়া অস্টিওআর্থ্রাইটিসে আপনার ব্যাথা কমিয়ে সঠিক ভাবে বাঁচতে সাহায্য করে। জয়েন্টের মধ্যে যে জেলিরমত বস্তু থাকে সঠিক ব্যায়াম এটিকে স্বাভাবিক রাখে এবং আপনার জয়েন্ট সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। অনেকে ব্যাথার ভয়ে ফিজিওথেরাপিস্টের দেয়া ব্যায়াম নিয়মিত করেন না এতে তাদের জয়েন্ট গুলো আরো শক্ত হয়ে যায় এবং চারপাশের মাংসপেশিগুলো দূর্বল হয়ে যায়। তাই সঠিক ব্যায়াম গুলো জানতে ও ব্যাথা মুক্ত থাকতে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিতে হবে।

অস্টিওআর্থ্রাইটিসে ফিজিওথেরাপি কিভাবে সাহায্য করতে পারে :

ব্যায়াম হল অস্টিওআথ্রাইটিসে-এর প্রথম সারির চিকিৎসা। একজন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক আপনাকে সর্বোত্তম সঠিক ব্যায়াম বেছে নিতে সাহায্য করার পাশাপাশি, ব্যথা নিরাময়ে চিকিৎসা এবং পরামর্শ প্রদান করে। ফিজিওথেরাপিস্ট আপনাকে শেখাতে পারে কীভাবে আপনি আক্রান্ত জয়েন্ট নড়াচড়া করবেন এবং আপনার হাঁটার উন্নতি করতে কীভাবে আপনার পেশীকে শক্তিশালী করবেন। এমনকি আপনার যদি জয়েন্ট প্রতিস্থাপনেরও প্রয়োজন হয়, তাহলে অন্যান্য চিকিৎসকের পাশাপাশি অপারেশনের আগে এবং পরে আপনাকে একজন ফিজিওথেরাপিস্টের সাথে পরামর্শ করতে হবে। ফিজিওথেরাপিস্ট আপনাকে অস্ত্রোপচার থেকে সর্বাধিক সুবিধা পেতে প্রস্তুত করবে এবং অস্ত্রোপচারের পরে ভালভাবে সকল মুভমেন্ট স্বাভাবিক করতে সহায়তা করবে।

লেখক:

সৈয়দ শামীম আহসান

বিপিটি (ঢাবি), এমপিএইচ (এডাস্ট)

এমএস, ক্লিনিক্যাল সোস্যাল ওয়ার্ক (ঢাবি)

বিভাগীয় প্রধান, ফিজিওথেরাপি বিভাগ

সোস্যাল ইসলামি ব্যাংক হাসপাতাল, ঢাকা।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *