ফিজিওথেরাপি বঙ্গবন্ধুর হাতে জন্ম, বঙ্গবন্ধুকন্যার হাতে ভাগ্য

মত-দ্বিমত

ডা. মহসীন কবির লিমন আহ্বায়ক,
সম্মিলিত ব্যাচেলর (বিপিটি) ডিগ্রিধারী ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক পরিষদ

বিশ্বায়নের এ যুগে উন্নত হচ্ছে সবকিছু। থেমে নেই চিকিৎসা বিজ্ঞানও। বর্তমান বিশ্বে চিকিৎসাবিজ্ঞান দিন দিন উন্নত হচ্ছে। সারা পৃথিবী যখন সাধারণ মানুষের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে নানা শাখা-প্রশাখা বিস্তারের মাধ্যমে এর ব্যপ্ততা ছড়াচ্ছে, তখন আমাদের দেশে সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে চিকিৎসাবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখাকে বিলুপ্ত করার অপচেষ্টা চলছে। বাংলাদেশে বাড়ছে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার চাহিদা আর এই চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই চিকিৎসাবিজ্ঞানে বিস্তার লাভ করছে ফিজিওথেরাপি নিয়ে নানা ব্যবসা। সাধারণ মানুষ চায় সুস্থ থাকতে, সুস্থ দেহে বেশিদিন বাঁচতে। ফিজিওথেরাপি চিকিৎসায় সাধারণত ব্যথানাশক ওষুধ ছাড়া বাত, ব্যথা, প্যারালাইসিস, স্পোর্টস ইনজুরি ও অন্য নানাবিধ সমস্যাসহ প্রতিবন্ধিতার চিকিৎসা প্রদান করা হয়ে থাকে।

বাংলাদেশে ফিজিওথেরাপির ইতিহাসটা অনেক গর্বের। ১৯৫৭ সালে পূর্ব পাকিস্তানের তথা বাংলাদেশের তোপখানা রোডের ফিরোজা বারী শিশু পঙ্গু হসপিটালে প্রথম ফিজিওথেরাপি বিভাগ চালু হয়। ফিজিওথেরাপি বিভাগটি চালু করতে তৎকালীন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রী অনুদান দেন এবং সেখানে ফিজিওথেরাপির ওপর শর্ট ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করেন। পরবর্তীকালে প্রয়াত অধ্যাপক আবুল হোসেন অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড ইউনিভার্সিটি থেকে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার ওপর পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন করে দেশে ফিরে ঢাকা মেডিকেল কলেজে সরাসরি সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন এবং ফিজিওথেরাপি বিভাগ চালু করেন। মুক্তিযুদ্ধের আগে অধ্যাপক আবুল হোসেনের হাত ধরে অধ্যাপক নুরুল আলম, অধ্যাপক গোলাম হোসেন, ডা. হাসিনা বানু ও আরও দু’একজন স্কলারশিপে পশ্চিম পাকিস্তানের জিন্নাহ পোস্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিকেল স্কুল থেকে ফিজিওথেরাপিতে প্রফেশনাল কোর্সসম্পন্ন করে পূর্ব পাকিস্তানে সরকারি হসপিটালে কাজ শুরু করেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের জন্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে মার্কিন অর্থোপেডিক সার্জন আর জে গাস্ট, যিনি তার টিম নিয়ে সে সময় ভারতের কেরালায় কাজ করছিলেন তিনি সেখান থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সহায়তায় আমাদের দেশে আসেন। সরাসরি বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে তিনি সে সময় বাংলাদেশে সর্বপ্রথম সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসনের জন্য একটি ওয়ার্ডে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসাসেবা চালু করেন। বঙ্গবন্ধুর সহায়তায় ডা. আর জে গাস্ট আরআইএইচডি নামক একটি প্রকল্প চালু করেন, যেটা বর্তমানে পঙ্গু হাসপাতাল নামে পরিচিত। এ আরআইএইচডিতে ১৯৭৩ সালে সর্বপ্রথম বাংলাদেশে অর্থোপেডিক কোর্স এবং ফিজিওথেরাপি ডিগ্রি কোর্স একসঙ্গে শুরু করেন ডা. আর জে গাস্ট। সে সময় অধ্যাপক আবুল হোসেন, অধ্যাপক নূরুল আলম, অধ্যাপক গোলাম হোসেন ও বিদেশি ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকরা ওই ফিজিওথেরাপি কোর্সের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। এ কোর্সটি চালুর মাধ্যমে শুরু হলো বাংলাদেশে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকদের এক নতুন অধ্যায়। আরআইএইচডি বা পঙ্গু হাসপাতালে কোর্সটি অর্থোপেডিক কোর্সের পাশাপাশি দুর্দান্তের সঙ্গে চলতে থাকে। ১৯৭৫-পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর হঠাৎ করেই ফিজিওথেরাপি কোর্সটি নিয়ে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র শুরু হয়। এরই মধ্যে প্রথম দুই ব্যাচে ২৫ জন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক পাস করে অনেকেই সরকারি স্পেশালাইজড হসপিটাল ও মেডিকেল কলেজগুলোতে প্রথম শ্রেণির পদে চাকরিতে যোগদান করেন এবং অনেকেই উন্নত বিশ্বে ফিজিওথেরাপির চাহিদার কারণে বিদেশে পাড়ি জমান। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর থেকেই ফিজিওথেরাপি কোর্সটি বন্ধ করতে তৎপর হলেন একদল চিকিৎসক এবং ১৯৮০ সালে প্রফেসর আর জে গাস্ট বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর তৎকালীন এমবিবিএস চিকিৎসকরা কোর্সটিকে পুরোপুরি বন্ধ করে দিলেন। বাংলাদেশে এমবিবিএসরা জন্ম দিলেন ফিজিক্যাল মেডিসিনের, যারা কখনওই ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক নন। শুরু হলো এদেশে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার কালো অধ্যায়। ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের বা ফিজিওথেরাপিস্টের নিশ্চিহ্ন করতে রাতারাতি দেশের বিশেষায়িত সরকারি হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজগুলোতে ফিজিওথেরাপি বিভাগের নাম পরিবর্তন করে করা হলো ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগ। ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকদের নানা তৎপরতায় পরবর্তীকালে ১৯৯৩ সালে বন্ধ হয়ে যাওয়া কোর্সটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা অনুষদের অধীনে ব্যাচেলর অব মেডিসিন ও ব্যাচেলর অব সার্জারি (এমবিবিএস), ব্যাচেলর অব ডেন্টাল সার্জারি (বিডিএস) এর পাশাপাশি ফের চালু করেন। কোর্সটি বর্তমানে বিএসসি ইন ফিজিওথেরাপি (বিপিটি) নামে পরিচিত। কোর্সটি চালু হওয়ার পর আবারও বাংলাদেশ পেতে শুরু করল ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক বা ফিজিওথেরাপিস্ট। ফিজিওথেরাপিস্টরা নতুন করে পাস করে বের হতে শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত থেমে থাকেনি কোর্সটি ধ্বংস করার নানা পরিকল্পনা। কোর্সটিকে ৫ বছর থেকে অবনমন করে ৩ বছর করার চেষ্টা, সরকার কর্তৃক বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিওথেরাপি ঘোষণা দেওয়ার পর বাজেটে টাকা বরাদ্দ ও জমি বরাদ্দ দেওয়া হলেও বছরের পর বছর ধরে কলেজটি না হতে দেওয়া, সরকারি মেডিকেলগুলোতে ফিজিওথেরাপিস্টদের জন্য প্রথম শেণির পদ তৈরিতে বারবার বাধা দেওয়া, স্বতন্ত্র ফিজিওথেরাপি কাউন্সিল হতে দিতে বাধা প্রদান করা, বিএমডিসি কর্তৃক কালো আইন পাস করিয়ে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকদের সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করার চেষ্টা এ পেশাটিকে ধ্বংস করারই ইঙ্গিত বহন করে। উল্টোদিকে বাংলাদেশে দিন দিন বাড়ছে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার চাহিদা। উন্নত বিশ্বে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসাবিজ্ঞানের প্রধানতম অংশ, তাই তারা ফিজিওথেরাপিকে আরও উন্নত করতে নানাভাবে পলিসি তৈরি করছে অথচ উল্টোচিত্রে বাংলাদেশে ফিজিওথেরাপি পেশাকে ধ্বংস করতে মরিয়া একদল চিকিৎসক। কিন্তু কেন?

বর্তমানে প্রায় প্রতিটি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালসহ অলিগলিতে ফিজিওথেরাপি সেন্টার চোখে পড়ে; কিন্তু সাধারণ মানুষ কি জানে এর ক’টিতে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক রয়েছে? একদল অসাধু চিকিৎসা ব্যবসায়ী ফিজিওথেরাপির নাম ভাঙিয়ে রোগীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। রোগীরা আদতে উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে উন্নত ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা পাচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখবে কে? বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে চিকিৎসাসংক্রান্ত বিষয়গুলো সাধারণত দেখভাল করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি)। যেখানে চিকিৎসকরা বিএমডিসি থেকে রেজিস্ট্রেশন নিয়ে দেশের মানুষের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করেন, সেখানে স্থান পাওয়ার অধিকার ছিল এমবিবিএস ও বিডিএস ডিগ্রিধারীদের পাশাপাশি বিপিটি ডিগ্রিধারীদেরও। কিন্তু তা তো হয়ইনি, উল্টো বিএমডিসি ফিজিওথেরাপি কোর্সটিকে ধ্বংস করতে বারবার নানামুখী পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। জেনে রাখা ভালো, ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক বা ফিজিওথেরাপিস্টরা মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে এবং ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের কোর্স কারিকুলাম মতে ফিজিওথেরাপিস্টরা স্বতন্ত্র পেশাজীবী, মানে তারা নিজেরাই রোগী দেখতে সক্ষম। কিন্তু বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত বিএমডিসি ফিজিওথেরাপিস্টদের মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের কাতারে ফেলে সূক্ষ্ম ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে পেশাটিকে ধ্বংস করতে কাজ করে যাচ্ছে। একজন ফিজিওথেরাপিস্ট হতে গেলে স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৫ বছরের ব্যাচেলর ডিগ্রি থাকতে হবে, ব্যাচেলর ডিগ্রির পর ফিজিওথেরাপিস্টরা বিশেষায়িত নানা বিষয়ে যেমন নিউরো ফিজিওথেরাপি, অর্থো ফিজিওথেরাপি, স্পোর্টস ফিজিওথেরাপি, চেস্ট ফিজিওথেরাপি, গাইনোকোলজিক্যাল ফিজিওথেরাপিতে তিন বছরের মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করছেন; আবার কেউ কেউ পিএইচডি ডিগ্রিপ্রাপ্তও হচ্ছেন। কিন্তু তাদের স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে কোনো কাউন্সিল নেই, নেই সরকারিভাবে কোনো পদ। যেখানে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, পাকিস্তানে ফিজিওথেরাপিস্টদের জন্য স্বতন্ত্র কাউন্সিল রয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডাসহ উন্নত সবক’টি দেশে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা সরকারিভাবে স্বীকৃত শক্তিশালী চিকিৎসাপদ্ধতি, সেখানে এই ২০২০ সালে এসে এদেশে ফিজিওথেরাপিস্ট থাকতেও, তাদের একটি গৌরবান্বিত অতীত ইতিহাস থাকতেও পুরো পেশাটি আজ ধ্বংসের দোরগোড়ায়। তবে কি, মাত্র শ’খানেক ফিজিক্যাল মেডিসিনের চিকিৎসকদের চাহিদা ও দৌরাত্ম্য মেটাতে এদেশের ১৬ কোটি মানুষ সঠিক ফিজিওথেরাপি চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হবে? ফিজিক্যাল মেডিসিনের পেছনে রয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও বিএমডিসি নামক শক্তিশালী খুঁটি। যদি তাই হয়, তবে আবারও পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হোক বিপিটি কোর্সটি, ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকরা তাদের সমমান অন্য পেশাজীবীদের দ্বারা আর অপমানিত হতে চায় না। উন্নত বিশে^র সঙ্গে তাল মেলাতে চিকিৎসাবিজ্ঞানকে সমৃদ্ধ করতে যে মেধাবী ছেলেমেয়েগুলো কোর্সটিতে ভর্তি হচ্ছে তাদের স্বপ্নকে দেশের মানুষকে সঠিক ফিজিওথরাপি চিকিৎসাসেবা দেওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত করার অধিকার কেউ রাখে না। রাষ্ট্রযন্ত্রের সময় হয়েছে আজ ফিজিওথেরাপিস্টদের নিয়ে ভাববার, তাদের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার। দেশে আজ বিপিটি ডিগ্রিধারী ফিজিওথেরাস্টিদের সংখ্যা প্রায় ৪ হাজার, আরও প্রায় ৩ হাজার ছাত্রছাত্রী সরকারি-বেসরকারিভাবে অধ্যয়নরত আছে। ফিজিওথেরাপিস্টরা আর কোনো বৈষম্যে, কোনো ষড়যন্ত্রের শিকার হতে চায় না। তারা চায় তাদের মেধা ও মননকে কাজে লাগিয়ে অন্যান্য স্বতন্ত্র চিকিৎসা পেশাজীবীদের মতো পূর্ণ অধিকার নিয়ে দেশের মানুষের সেবা করতে এবং উন্নত দেশ গড়তে চিকিৎসাবিজ্ঞানের উন্নতির ধারাবাহিকতাকে আরও সমৃদ্ধ করতে।

বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে যে ফিজিওথেরাপি শিক্ষা বাংলাদেশে গর্বের সঙ্গে যাত্রা শুরু করল, সেই ফিজিওথেরাপি পেশার প্রতি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সুনজর দিয়ে সরকারের অনুমোদিত জমিতে ও বরাদ্দকৃত টাকায় দ্রুত বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিওথেরাপি প্রতিষ্ঠা করে এবং ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকদের জন্য প্রাপ্য স্বতন্ত্র চিকিৎসা পেশাজীবী হিসেবে সরকারি হাসপাতালগুলোতে নিয়োগ নিশ্চিত করে ১৬ কোটি বাঙালিকে সঠিক ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা পেতে পেশাগত মূল্যায়ন নিশ্চিত করবেন বলে মনে করেন দেশের ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা পেশাজীবীরা।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *