মা শব্দটি মনে আসলেই চোখের সামনে ভেসে উঠে স্নেহ, আদর-মমতার এক ছবি। অকৃত্রিম ভালোবাসার এই সম্পদ মা, কখনো ছোট্ট পুকুর – যেখানে দিনরাত সাঁতার কাটে ভালবাসার নৌকা, আবার কখনো মমতার শীতল ছায়া। সন্তানের জন্য মা সব পারেন। সহিষ্ণু, নিরলস ও সার্থকভাবে সংসারের হাল ধরার পরও সন্তানের জন্য মা হয়ে উঠেন জননী থেকে অসাধারণ জননীতে।
মায়ের প্রতি সন্তানের যে ভালোবাসা, তা প্রকাশের সুযোগ হয়ে ওঠে না সিংহভাগ মানুষেরই। মায়ের কাছে না বলা কথাগুলো পৌঁছে দেবার বিশেষ উপলক্ষ এই বিশ্ব মা দিবস । যার শুরুটা হয়েছিল, উনিশ শতকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েবস্টার জংশনের বাসিন্দা আনা জার্ভিসের তার মায়ের প্রতি ভালোবাসা থেকে। গ্রীক সভ্যতায় বসন্তের এই বিশেষ দিনটিকে বলা হত ‘মাদার অফ গড’।
বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে মার্চ, এপ্রিল অথবা মে মাসে ভিন্ন ভিন্ন দিনে এ দিবসটি উদ্যাপিত হয়। বাংলাদেশে প্রতিবছর মে মাসের দ্বিতীয় রোববার এ দিবসটি উদ্যাপিত হয়ে থাকে। বিশ্ব মা দিবস উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি ও আর্থ-সামাজিক সংগঠন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে, আলোচনা সভা, সংবর্ধনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার হয়েছে মা দিবসের বিশেষ অনুষ্ঠানমালা।
মা সন্তানকে জন্ম দিতে গিয়ে জীবনের কঠিনতম কস্ট সহ্য করেন। নিজের সব চাওয়া-পাওয়াগুলোকে পাশ কাটিয়ে সন্তানের ভালোলাগাই যার কাছে সবকিছু। বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভের রিপোর্টে দেখা গেছে, আমাদের দেশের ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী মায়েদের ৪২ শতাংশই এ্যানিমিয়ার মত জটিল রোগে আত্রান্ত হচ্ছেন। এ বিষয়ে ইউএসএআইডি বাংলাদেশের মিশন ডিরেক্টর রিচার্ড গ্রিন বলেন, ২০০১-২০১০ বাংলাদেশ মাতৃমৃত্যুর হার ৪০ শতাংশ কমেছে। যে কটি দেশ এই সময়ের মধ্যে এই বিষয়গুলোতে এগিয়ে গিয়েছে, তাদের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।
১৯৭১ সাল থেকে বাংলাদেশের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করছে ইউএসএআইডি বাংলাদেশ। ইউএসএআইডি বাংলাদেশের সিনিয়র মনিটরিং, ইভ্যালুয়েশন অ্যান্ড রিসার্চ অ্যাডভাইসর ডঃ কান্তা জামিল, মা দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন সকল মা’কে।। তিনি আরো বলেছেন, মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল-৫ অনুযায়ী মাতৃ-মৃত্যুহার ৭৫ শতাংশ কমাতে হবে। এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বিশ্বের তালিকাভুক্ত ৭৫টি দেশের মধ্যে মাত্র ৯টি দেশ অগ্রগতির পথে রয়েছে। বাংলাদেশ এই ৯টি দেশের মধ্যে একটি। তিনি আরো বলেন, গত দশ বছরে মায়েদের চিকিতসা সেবা গ্রহণের হার ১০ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০ শতাংশে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে খুব অচিরেই বাংলাদেশের মায়েরা একটি সুন্দর এবং সুস্থ জীবন উপভোগ করতে পারবেন।
বিশেষ কোন দিনে নয়, বছরের সবকটা দিন মায়ের মুখে থাকুক অনাবিল হাসি-আনন্দ। অটুট থাকুক ভালবাসার এই বন্ধন। শুভেচ্ছা এবং ভালবাসা রইল পৃথিবীর সকল মায়ের প্রতি। ভাল থাকুক মা, সুন্দর হোক তাঁর জীবন।